Ads

হযরত নূহ (আঃ) এর জীবনী

হযরত নূহ (আঃ) এর জীবনী


হযরত নূহ (আঃ) ইসলামের ইতিহাসে একজন বিশিষ্ট নবী। তিনি ছিলেন নবী আদম (আঃ) এর নবম প্রজন্ম। তার জন্ম ও জীবনের সময়কাল মানবজাতির প্রথম যুগের সাথে সম্পর্কিত এবং কোরআন, বাইবেল ও তাওরাতে তার জীবনী বর্ণিত হয়েছে। হযরত নূহ (আঃ) এর জীবন থেকে আমরা ধৈর্য, বিশ্বাস এবং আল্লাহর উপর অটল আস্থার শিক্ষা পাই।




নবুওয়ত প্রাপ্তি ও দাওয়াতের সূচনা

হযরত নূহ (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে নবুওয়ত প্রাপ্ত হন। তার সময়কাল ছিল একটি পাপ ও অবিশ্বাসের যুগ। মানুষ মূর্তি পূজা এবং বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত ছিল। নূহ (আঃ) তার সম্প্রদায়কে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান করতে শুরু করেন। তিনি তাদের সতর্ক করেন যে, যদি তারা আল্লাহর পথে ফিরে না আসে তবে তাদের উপর কঠিন শাস্তি আসবে।


৯৫০ বছরের দাওয়াত

নূহ (আঃ) তার সম্প্রদায়ের কাছে দীর্ঘ ৯৫০ বছর ধরে আল্লাহর বার্তা প্রচার করেন। তিনি তাদের বিভিন্নভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেন এবং তাদের আল্লাহর একত্বের পথে আহ্বান জানান। কিন্তু খুব কম মানুষই তার কথায় সাড়া দেয়। অধিকাংশ মানুষই তার প্রতি উপহাস করে এবং তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করে।


অস্বীকৃতি ও প্রতিকূলতা

নূহ (আঃ) এর সম্প্রদায়ের নেতারা তাকে বিভিন্নভাবে বাধা প্রদান করে এবং তার উপর অত্যাচার চালায়। তারা তাকে ও তার অনুসারীদের নির্যাতন করে এবং তাদেরকে সমাজ থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু নূহ (আঃ) আল্লাহর উপর অটল বিশ্বাস রাখেন এবং তার দাওয়াত চালিয়ে যান।


নূহ (আঃ) এর দোয়া

যখন নূহ (আঃ) উপলব্ধি করেন যে, তার সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ কখনই সঠিক পথে ফিরে আসবে না, তখন তিনি আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন যে, যারা অবিশ্বাসী তাদেরকে ধ্বংস করে দিন এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে রক্ষা করুন।


প্লাবন ও নৌকা নির্মাণ

আল্লাহ নূহ (আঃ) কে নির্দেশ দেন একটি বিশাল নৌকা (আরক) নির্মাণ করতে। তিনি আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে নৌকা নির্মাণ শুরু করেন। নৌকা নির্মাণের সময়ও তার সম্প্রদায়ের লোকেরা তাকে উপহাস করে। আল্লাহ নির্দেশ দেন যে, নৌকা প্রস্তুত হলে নূহ (আঃ) তার অনুসারীদের নিয়ে তাতে আরোহন করবেন এবং প্রতিটি প্রাণীর এক জোড়া নিয়ে যাবেন।


প্লাবনের সূচনা

আল্লাহর নির্দেশে আকাশ থেকে প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয় এবং ভূ-পৃষ্ঠ থেকে পানি উঠতে থাকে। এভাবে পৃথিবী প্লাবিত হয় এবং নূহ (আঃ) এর নৌকা পানির উপর ভাসতে থাকে। আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে এবং যারা অবিশ্বাসী ছিল তারা সকলেই প্লাবনে নিমজ্জিত হয়।


নবীর পুত্রের অমান্যতা

নূহ (আঃ) এর একটি সন্তান ছিল, যে অবিশ্বাসীদের সাথে যুক্ত ছিল এবং নৌকায় উঠতে অস্বীকৃতি জানায়। নূহ (আঃ) তাকে নৌকায় উঠতে আহ্বান করেন, কিন্তু সে তা অমান্য করে এবং প্লাবনের জলে ডুবে যায়। এটি নূহ (আঃ) এর জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল, কিন্তু তিনি আল্লাহর সিদ্ধান্তকে মেনে নেন।


প্লাবনের অবসান ও নৌকা থেমে যাওয়া

আল্লাহর নির্দেশে প্লাবন শেষ হয় এবং পানি সরে যেতে শুরু করে। নূহ (আঃ) এর নৌকা জুদি পর্বতে থেমে যায়। নূহ (আঃ) এবং তার অনুসারীরা নিরাপদে সেখানে অবতরণ করে এবং আল্লাহর প্রশংসা করেন। তারা নতুনভাবে জীবন শুরু করেন এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে জীবনযাপন করতে থাকেন।


পরবর্তী জীবন ও শিক্ষা

নূহ (আঃ) এর জীবন ও তার সম্প্রদায়ের ঘটনাগুলো আমাদের জন্য এক বিশাল শিক্ষা। তার ধৈর্য, আল্লাহর প্রতি অটল বিশ্বাস এবং সত্যের পথে অবিচল থাকার উদাহরণ আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। তার জীবনের কাহিনী আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর নির্দেশ মান্য করা এবং তার প্রতি অবিচল আস্থা রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।


উপসংহার

হযরত নূহ (আঃ) এর জীবন কাহিনী থেকে আমরা শিখতে পারি যে, ধৈর্য এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহর পথে থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তার জীবনের ঘটনাগুলো আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যের পথে চলার জন্য অনেক সময় প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু আল্লাহ তার নেক বান্দাদের সর্বদা রক্ষা করেন। নূহ (আঃ) এর জীবন আমাদের জন্য এক মহা অনুপ্রেরণা এবং তার জীবন কাহিনী আমাদেরকে সঠিক পথে চলার দিক নির্দেশনা দেয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
কমেন্ট করতে এখানে ক্লিক করুন

এ.আর.আরিফিন নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১