মাইগ্রেন থেকে মুক্তির উপায় এবং মাইগ্রেন হওয়ার কারণ
মাইগ্রেন হল এক ধরনের নিউরোলজিক্যাল বিকার যা সাধারণত তীব্র মাথাব্যথা হিসেবে পরিচিত। এটি সাধারণত মাথার একপাশে হয় এবং ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাইগ্রেনের প্রধান উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, বমি ভাব, বমি এবং আলো
ক ও শব্দ সংবেদনশীলতা। অনেক সময় এই অবস্থায় ভুক্তভোগীরা দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে অক্ষম হয়ে পড়েন।
ক ও শব্দ সংবেদনশীলতা। অনেক সময় এই অবস্থায় ভুক্তভোগীরা দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে অক্ষম হয়ে পড়েন।
মাইগ্রেনের নির্দিষ্ট কারণ এখনও সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায়নি, তবে বংশগত প্রভাব এবং পরিবেশগত কারণগুলি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া, মানসিক চাপ, নির্দিষ্ট খাবার, হরমোনের পরিবর্তন, এবং ঘুমের অভাবও মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে। মাইগ্রেনের চিকিৎসায় বিভিন্ন ঔষধ ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব।
এই রোগটি মহিলাদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় বেশি দেখা যায় এবং এটি ব্যক্তি বিশেষে বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। মাইগ্রেনের সময়কাল, তীব্রতা এবং উপসর্গগুলি ভিন্ন হতে পারে, তাই চিকিৎসা পরিকল্পনা ব্যক্তিগতকৃত হওয়া প্রয়োজন।
.
মাইগ্রেন কেন হয় তা জেনে নিন
মাইগ্রেনের সঠিক কারণ এখনও সম্পূর্ণরূপে জানা যায়নি, তবে গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে এটি বেশ কয়েকটি কারণের সংমিশ্রণে ঘটে। প্রধান কারণগুলো নিম্নরূপ:
১. জেনেটিক বা বংশগত কারণ
মাইগ্রেনের ইতিহাস থাকা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি থাকে। এটি প্রমাণ করে যে মাইগ্রেনের জন্য জেনেটিক্স বড় ভূমিকা পালন করে।
২. নিউরোলজিক্যাল কারণ
মাইগ্রেনের সময় মস্তিষ্কের রাসায়নিক সমন্বয় এবং স্নায়ুতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটে। বিশেষ করে, মস্তিষ্কের সেরোটোনিন লেভেলের পরিবর্তন মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে। সেরোটোনিন মস্তিষ্কে রাসায়নিক সংকেত প্রেরণে সাহায্য করে।
৩. হরমোনাল পরিবর্তন
নারীদের মধ্যে মাইগ্রেনের প্রবণতা বেশি, যা প্রায়ই ঋতুস্রাবের সময় বা হরমোনাল পরিবর্তনের সময় ঘটে। ইস্ট্রোজেনের মাত্রার পরিবর্তন মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে।
৪. খাদ্য ও পানীয়
নির্দিষ্ট খাবার ও পানীয় মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে। যেমন:
- চকোলেট
- চিজ
- অ্যালকোহল (বিশেষ করে রেড ওয়াইন)
- ক্যাফেইন অতিরিক্ত পরিমাণে
৫. পরিবেশগত কারণ
পরিবেশগত পরিবর্তনও মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে। যেমন:
- তীব্র আলো বা জ্বলজ্বলে আলো
- জোরে শব্দ
- তীব্র গন্ধ (পারফিউম, পেইন্ট)
- আবহাওয়ার পরিবর্তন
৬. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং মানসিক চাপের কারণে মাইগ্রেন হতে পারে। দৈনন্দিন জীবনের চাপ এবং কাজের চাপ মাইগ্রেনের তীব্রতা বাড়াতে পারে।
৭. ঘুমের অভাব
অনিয়মিত ঘুম বা ঘুমের অভাব মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, যা মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে।
৮. শারীরিক কার্যক্রম
অতিরিক্ত শারীরিক কার্যক্রম বা পরিশ্রমও মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে।
মাইগ্রেনের কারণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং একই ব্যক্তির ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তাই মাইগ্রেনের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা ব্যক্তিগতকৃত হওয়া প্রয়োজন।
মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। এর মধ্যে কিছু স্বল্পমেয়াদী এবং কিছু দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধক পদ্ধতি রয়েছে।
১. ঔষধি চিকিৎসা
তীব্র মাইগ্রেনের সময় ব্যবহৃত ঔষধ:
- ট্রিপটানস (Triptans): সুমাট্রিপটান (Sumatriptan), রিজাট্রিপটান (Rizatriptan) ইত্যাদি।
- পেইন রিলিভারস: ইবুপ্রোফেন (Ibuprofen), ন্যাপ্রক্সেন (Naproxen)।
- অ্যান্টিমেটিকস (Antiemetics): মাইগ্রেনের সাথে বমি বা বমি বমি ভাব থাকলে মেটোক্লোপ্রামাইড (Metoclopramide) বা প্রোমেথাজিন (Promethazine) ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এরগোটামাইনস (Ergotamines): এরগোটামাইন (Ergotamine) বা ডাইহাইড্রোএরগোটামাইন (Dihydroergotamine)।
আরো পড়ুন: মেথির উপকারিতা চুলের জন্য
প্রতিরোধক ঔষধ:
- বিটা-ব্লকারস (Beta-blockers): প্রোপ্রানোলল (Propranolol), মেটোপ্রোলল (Metoprolol)।
- ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারস (Calcium Channel Blockers): ভেরাপামিল (Verapamil)।
- ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস (Tricyclic Antidepressants): অ্যামিট্রিপ্টিলিন (Amitriptyline)।
- অ্যান্টি-সিজার ড্রাগস (Anti-seizure Drugs): টপিরামেট (Topiramate), ডিভ্যালপ্রোক্স (Divalproex)।
২. জীবনধারা পরিবর্তন
- নিয়মিত ঘুম ও খাদ্যাভ্যাস: সঠিক সময়ে ঘুমানো এবং খাদ্য গ্রহণ করা।
- পর্যাপ্ত পানি পান: দেহে পানির পরিমাণ ঠিক রাখা।
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: যোগব্যায়াম, ধ্যান, শ্বাসের ব্যায়াম।
- শরীরচর্চা: নিয়মিত ব্যায়াম করা, যা দেহে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
- ট্রিগার এড়ানো: কিছু খাবার, আলো, এবং শব্দ মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে, তাই সেগুলো এড়িয়ে চলা।
৩. প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া প্রতিকার
- আদা: আদা চা পান করা যা মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- পিপারমিন্ট ও ল্যাভেন্ডার তেল: মাথার ওপরে এবং কপালে ম্যাসাজ করা।
- হিম শীতল প্রয়োগ: মাথায় হিম শীতল প্যাক রাখা।
- আলো এড়ানো: অন্ধকার এবং শান্ত পরিবেশে থাকা।
মাইগ্রেন বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং এর চিকিৎসা ব্যক্তিগত প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে। চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং চিকিৎসা পরিকল্পনা অনুযায়ী চলা উচিত।
এ.আর.আরিফিন নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url